বেল পাতার ১৯ টি উপকারিতা ও ৭টি অপকারিতা

বেল পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি যদি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের বেল পাতার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা এবং অপকারিতা সহ আরো অনেক অজানা বিষয় সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জানাবো।  

বেল-পাতার-১৯-টি-উপকারিতা-ও-৭টি-অপকারিতা

আমরা বেলের উপকারিতা সম্পর্কে জানলেও বেল পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানিনা। আজকে আমরা বেল পাতার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা, অপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম, বেল পাতার পুষ্টিগুণ এমনকি রূপচর্চায় বেল পাতার ব্যবহার সহ আরো অনেক কিছু জানাবো। 

বেল পাতার ১৯ টি উপকারিতা 

বেল পাতার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। কারণ এটি সেই আদিমকাল থেকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। আর এটি বিভিন্ন রোগ সারাতে বেশ কার্যকরী। একটি দুইটি নয় অনেক রোগের সমাধান রয়েছে এই বেল পাতায়। বেল পাতায় থাকা ঔষধীয় গুনাগুন আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ সারিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। 

আরো পড়ুন: তুলসী পাতার ২০ টি উপকারিতা ও ১১ টি অপকারিতা

আপনি যদি নিয়মিত বেলপতা খান তাহলে আপনি বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা পাবেন বলে মনে করেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকগন। শুধুমাত্র আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকগন নয় এটি এলোপ্যাথি ডাক্তাররাও বিভিন্ন রোগের বেলপাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বেল পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের বেল পাতার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা এবং কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে জানাবেন। চলুন জেনে নিই।

বেল পাতার ১৯ টি উপকারিতা 

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে 
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে 
  • পাচনতন্ত্রের সুরক্ষা দেয়
  • শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখে 
  • সংক্রমণ প্রতিরোধ করে 
  • ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী করে তোলে 
  • জ্বর কমাতে কাজ করে 
  • হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে 
  • ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে 
  • শরীর ঠান্ডা রাখে
  • এলার্জিজনিত সমস্যা দূর করে 
  • চুলের জন্য উপকারী 
  • জন্ডিসের বিরুদ্ধে লড়াই করে
  • স্কার্ভি রোগ ভালো করে 
  • কিডনি ভালো রাখে
  • যকৃতের জন্য উপকারী 
  • পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করে 
  • মাতৃ দুধ বৃদ্ধি করে
  • তারুণ্য ধরে রাখে

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: বর্তমানে আমাদের এই দেশে ডায়াবেটিস রোগটি এত বেশি ছড়িয়ে পড়েছে যে দিন দিন এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রায় প্রতিটা ঘর জুড়েই এ রোগের বিচরণ। এই ভয়াবহ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বেলপাতা। বলা যেতে পারে বেলপাতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি কার্যকরী ওষুধ। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করা এবং কোলেস্ট্রল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যার ফলে ডায়াবেটিস দূরে থাকে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: যেখানে আমাদের হাতের কাছেই বেলপাতা রয়েছে সেখানে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য চিন্তার আর কোন কারণ থাকতেই পারে না। বেল পাতায় রয়েছে কার্যকরী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে যার ফলে আমাদের শরীরে রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে। যার ফলে যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত বেল পাতার রস খেলে উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

পাচনতন্ত্রের সুরক্ষা দেয়: পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে সেই বহু কাল ধরে বেলপাতা ব্যবহার হয়ে আসছে। কারণ এটি আমাদের খাবার হজম করতে সাহায্য করে যার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়। এছাড়াও মনে রাখবেন এটি আমাদের কোষ্ঠকাঠিনের সমস্যা দূর করতেও বেশ কার্যকরী।

শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখে: আপনি জানলে অবাক হবেন যে বেল পাতায় রয়েছে শ্বাসকষ্ট এবং এজমা দূর করার জাদুকারি উপকারিতা। বেল পাতায় রয়েছে প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য। যার ফলে এটি আমাদের পরিষ্কার রাখে এবং শ্বাসকষ্ট দূর করে।

সংক্রমণ প্রতিরোধ করে: বেল পাতায় রয়েছে শক্তিশালী এন্টিব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাস বৈশিষ্ট্য যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ এবং ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী করে তোলে: বেল পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

জ্বর কমাতে কাজ করে: যাদের প্রায় জ্বরের সমস্যা লেগেই থাকে তারা যদি নিয়মিত বেল পাতার রস খান তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে। কারণ বেল পাতায় থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যার ফলে এটি খেলে জ্বর কমে।

হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে: বেল পাতায় থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং সেইসাথে আমাদের রক্তে থাকা কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। আর রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকার ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন খুব ভালো মতো হয়। তাই আমাদের হৃদপিণ্ড ও সুস্থ থাকে।

ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে: যাদের শরীরে ঘামের দুর্গন্ধ থাকে তারাই বোঝেন এটি ঠিক কতটা বিরক্তিকর একটি রোগ। আর এই রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে বেলপাতা। যাদের শরীরে প্রচন্ড পরিমাণ ঘামের দুর্গন্ধ রয়েছে তারা যদি নিয়মিত গোসলের পানির সাথে বেলপাতা সিদ্ধ করে ভালোভাবে মিশিয়ে গোসল করেন তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

শরীর ঠান্ডা রাখে: অনেক সময় অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে আমাদের শরীর অনেক গরম হয়ে যায়। আর এই সময় বেলপাতা দিয়ে তৈরি করা শরবত খেলে শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমিয়ে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

এলার্জিজনিত সমস্যা দূর করে: যেকোনো এলার্জি বা চুলকানিতে বেলপাতা খুব ভাল একটি সমাধান। এলার্জি বা চুলকানি জায়গায় বেলপাতা বেটে প্রলেপ দিলে এলার্জি সমস্যা দূর হয়ে যায়।

চুলের জন্য উপকারী: চুল পড়া রোধে বেলপাতা অনেক উপকারী। কারো চুল অতিরিক্ত পড়ে যায় তাহলে বেলপাতা বেটে রস বানিয়ে সেটি মাথায় দিলে চুল পড়া কমে যায় এবং সেই সাথে নতুন চুল বাজাতে সাহায্য করে তার চুল দ্রুত লম্বা করে। শুধু তাই নয় এটি টাক মাথায় নতুন চুল গজাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জন্ডিসের বিরুদ্ধে লড়াই করে: আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা বেলপাতা কে জন্ডিসের চিকিৎসার একটি মহা ঔষধ বলে বিবেচনা করেছেন। কারণ যাদের জন্ডিস এর প্রবলেম রয়েছে তারা নিয়মিত বেলপাতা খেলে জন্ডিসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এক কথায় বলা যায় জন্ডিস দূর করতে বেল পাতার কার্যকারিতা অনেক বেশি।

স্কার্ভি রোগ ভালো করে: বেলপাতা রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। যার ফলে এটি স্কার্ভি রোগ হওয়া থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও বেল পাতার রস স্কার্ভি রোগের জন্য অনেক উপকারী।

কিডনি ভালো রাখে: বেল পাতায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকায় এটি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং সেই সাথে আমাদের কিডনি ভালো রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

যকৃতের জন্য উপকারী: বেল পাতার রসের রয়েছে বেলে বিটা ক্যারোটিন, বেলে থাইমিন, রাইবোফ্লেডিনের মত উপকারী ভিটামিন যা আমাদের যকৃতের জন্য অনেক উপকারী। এগুলো যকৃতকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করে: পিরিয়ডের সময় কোন কারনে রক্তপাত বেশি হলে এই অতিরিক্ত রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করতে বেলপাতার রস উপকারী। এ সময় বেল পাতার রস খেলে পিরিয়ডকালীন অতিরিক্ত রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করে।

মাতৃ দুধ বৃদ্ধি করে: যে সকল মায়েরা তাদের সন্তানদের স্তন্যপান করার তাদের শরীরে মাতৃদুগ্ধ উৎপাদন করতে সাহায্য করে এই বেল পাতা। নিয়মিত বেলপাতার রস খেলে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

তারুণ্য ধরে রাখে: বেল পাতার রসের থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরে শীতলতা প্রদান করে যার ফলে এটি আমাদের ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। নিয়মিত কিছুদিন খালি পেটে বেল পাতার রস খেলে এটি আমাদের ত্বকের বার্ধক্য দূর করে যার ফলে তারুণ্য ভাব ধরে রাখে।

বেল পাতার ৭ টি অপকারিতা

বেল পাতার অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের জানাবো আজ। উপরের আলোচনায় এতক্ষণ আমরা আপনাদের বেল পাতার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা সম্পর্কে জানিয়েছি। বেলপাতা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী এ কথা একেবারেই সত্য। কিন্তু উপকারিতার পাশাপাশি এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে কিনা এটি জানার জন্য অবশ্যই আপনার মনের মধ্যে প্রশ্ন আসতে পারে। আজকেই প্রশ্ন দূর করতে আর্টিকেলের এই অংশটুকু পড়ুন। 

বেল-পাতার-৭-টি-অপকারিতা

সবচেয়ে বুদ্ধিমান এর কাজ হচ্ছে কোন কিছুর উপকারিতা সম্পর্কে জানার পাশাপাশি অবশ্যই তার অপকারিতা সম্পর্কে জানাটা আবশ্যক। কারণ আমরা জানি যে কোন জিনিসের উপকারিতার পাশাপাশি এটি অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে এর অপকারিতা রয়েছে। তাই বেল পাতা খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই বেল পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানা উচিত।বেল পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে চলুন জেনে নিই বেলপাতার কয়েকটি অপকারিতা সম্পর্কে।

বেল পাতার ৭ টি অপকারিতা 

  • হজমের প্রক্রিয়াকে জটিল করে 
  • নিম্ন রক্তচাপ এর ক্ষেত্রে ক্ষতিকর 
  • এলার্জি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর 
  • গর্ভবতী এবং স্তন্যদান কারীদের ক্ষেত্রে 
  • বমি বমি ভাব হতে পারে
  • বাচ্চাদের ক্ষেত্রে
  • লিভারের জন্য ক্ষতিকর

হজমের প্রক্রিয়াকে জটিল করে: বেল পাতার রস আমাদের খাবার হজম করতে সাহায্য করে এই কথা যেমন সত্য ঠিক তেমনি এটি বেশি পরিমাণ খেলে হজম প্রক্রিয়াকে অনেক বেশি জটিল করে তুলতে পারে। যার ফলে পেটের সমস্যা দেখা দেয়।

নিম্ন রক্তচাপ এর ক্ষেত্রে ক্ষতিকর: বেলপাতার রস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে যার ফলে এটি উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের জন্য অনেক উপকারী এই কথা যেমন সত্য ঠিক তেমনি অপরদিকে যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে তারা যদি অতিরিক্ত পরিমাণ বেল পাতার রস খায় তাহলে তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাদের রক্তচাপ আরও বেশি নিম্ন হয়ে যায় এবং শরীর দুর্বল হয়ে মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই বেল পাতা খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই এটি খেয়াল রাখবেন।

এলার্জি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর: মনে রাখবেন যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তারা এই বেল পাতার রস থেকে দূরে থাকাই ভালো। তাদের জন্য এটি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

গর্ভবতী এবং স্তন্যদান কারীদের ক্ষেত্রে: গর্ভবতী এবং স্তন্যদান কারীর ক্ষেত্রে এই বেল পাতার রস না খাওয়ায় উত্তম। তবে একান্তই যদি খেতে চান তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর খাবেন।

বমি বমি ভাব হতে পারে: বেল পাতা খাওয়ার পর যদি কারোর মাথা ঘোরার বমি বমি ভাব দেখা যায় তবে অবশ্যই সেটি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ যাদের এই ধরনের সমস্যা হয় তারা খালি পেটে বেল পাতা খেলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। তাই এই ব্যাপারে সচেতন থাকবেন।

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে: বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সরাসরি এই বেল পাতার রস ব্যবহার না করাই উত্তম। কারণ বাচ্চাদের কে ডাক্তাররা বেলপাতা থেকে বিরত রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

লিভারের জন্য ক্ষতিকর: বেল পাতার রস খাওয়া উপকারী বলে এটি অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে লিভারের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে যার ফলে লিভার তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাই অবশ্যই এটি অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। দীর্ঘদিন ধরে বেল পাতার রস খেলে এটি লিভারের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

বেল পাতার পুষ্টিগুণ 

বেল পাতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আপনি যদি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে বেল পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশটুকু মনোযোগ সহকারে পড়ুন। বেলপাতা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী এটি আমরা অনেকেই জানলেও এতে কোন কোন পুষ্টিগুণ রয়েছে সেটি সম্পর্কে অনেকেই জানিনা। আজকে আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের বেল পাতায় কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেটি সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই।

বেল পাতার পুষ্টিগুণ সমূহ: 

  • ক্যালসিয়াম 
  • আয়রন
  • ফাইবার
  • ভিটামিন এ 
  • ভিটামিন বি ১
  • ভিটামিন বি ৬
  • ভিটামিন সি এবং 
  • ফসফরাস 

বেল পাতায় উপস্থিত থাকা এই পুষ্টি উপাদান গুলো আমাদের শরীরে ঠিক কতটা উপকারী তা নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পারছেন। বেল পাতায় থাকা এই সকল পুষ্টি উপাদান গুলো আমাদের শরীরে নানা সময় নানা ধরনের উপকার করে থাকে যা আমাদের অজানা। তাই সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই বেল পাতার রস খাবেন।

বেল পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম 

বেল পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানেন কি। বেল পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানলেও এটি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকে জানেনা। এটি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে না জানার পরে উপকারিতা থেকে এটা বঞ্চিত হতে পারে বা অনেক সময় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

আরো পড়ুন: পেয়ারা পাতার ১৬ টি বিশেষ উপকারিতা-চুলের যত্নে পেয়ারা পাতা

কোন কিছু খাওয়ার পূর্বে সেটি সম্পর্কে জানার অর্থাৎ এর উপকারিতা ও অপকারিতা জানা যেমন জরুরী ঠিক তেমনি এটি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানাও জরুরী। তাই বেল পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আপনার যদি জানা থাকে তাহলে আপনার ক্ষতি হওয়ার আর কোন সম্ভাবনা থাকবে না বরং তাকে এটি থেকে সম্পূর্ণরূপে পুষ্টি উৎপাদন পেতে সক্ষম হবে। চলুন জেনে নিন পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে। 

খালি পেটে বেল পাতা খাওয়ার নিয়ম: 

সাধারণত বেলপাতা সকালে খাওয়া সবচেয়ে উত্তম। সকালে খালি পেটে বেল পাতার রস খেলে এর উপকারিতা পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায়। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে বেল পাতার রস অথবা বেলপাতা বেটে পেস্ট বানিয়ে খেলে পেটের যাবতীয় সমস্যা সমাধান হয়, হজমের উন্নতি হয় এবং সেইসাথে আমাদের অন্ত্র পরিষ্কার থাকে। 

বেল পাতার রস বানিয়ে বা এর পেস্ট তৈরি করে খাওয়া ছাড়াও আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে একটি মাঝারি আকারের বেলপাতা চিবিয়ে খেতে পারে। সকালে বেলপাতা চিবিয়ে খেলেও বেশ উপকার পাওয়া যায়।

বেলপাতা গরম পানি সাথে মিশিয়ে সেবন: 

আপনার যদি শ্বাসকষ্ট ঠান্ডা সর্দি কাশি অথবা হাঁপানির মত জটিল সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি খুব সহজেই বেলপাতা গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারে। অনেক উপকার পাবেন। 

শ্বাসকষ্ট দূর করার আরো একটি উত্তম উপায় হচ্ছে পাঁচ থেকে ছয়টি বেলপাতা নিয়ে এটি গরম পানিতে ভালোভাবে সেদ্ধ করে সেই পানির বাসবো যদি নাক দিয়ে টানেন তাহলে স্বাসতন্ত্র পরিষ্কার হবে এবং নিঃশ্বাস নিতে সুবিধা হবে।। তাই যাদের শ্বাসকষ্টের প্রবলেম আছে তারা এটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। 

মনে রাখবেন যে কোন ধরনের ঠান্ডা অথবা ঠান্ডা জনিত যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য এই পদ্ধতি বেশ কার্যকারী। 

বেলপাতা হালকা মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া: 

অনেকেই আছে যারা বেল পাতার রস সরাসরি খেতে পারেন না। সেই ক্ষেত্রে অল্প একটু মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারে। এতে উপকারও অনেক বেশি পাবেন। পেট পরিষ্কার হবে, হজম ভালো হবে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে সেটিও দূর হবে। 

বিশেষত বলা যেতে পারে আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে তাহলে বেল পাতার সাথে মধু মিশিয়ে খেলে বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়। 

বেলপাতা ডায়াবেটিস রোগীদের খাওয়ার নিয়ম: 

টাইপ-১ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেলপাতা কে একটি মহা ঔষধ বলা যেতে পারে। কারণ প্রতিদিন সকালে নিয়মিত বেলপতা রস তৈরি করে এক চামচ করে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এক কথায় এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। 

মনে রাখবেন এটি যেহেতু আমাদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সেহেতু নিয়মিত ব্যবহার করার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর ব্যবহার করবেন। 

বেল পাতার প্রতিদিন সেবনের পরিমাণ 

বেল পাতা খাওয়া শুরুতে প্রথমে এক চা চামচ অথবা ৫-১০ মিলি পরিমাপ করে খেতে হবে। এরপর এটি শরীরের সাথে অভ্যস্ত হয়ে গেলে পরবর্তীতে এর পরিমাণ কিছুটা বাড়ানো যেতে পারে। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন এটি সর্বোচ্চ ১-২ চামচ এর বেশি খাওয়া যাবে না। 

মনে রাখবেন পরিমিত মাত্রায় বেলপাতা খাওয়া যেমন আমাদের শরীরের জন্য উপকারী ঠিক তেমনি অতিরিক্ত মাত্রায় বেলপাতা খেলে এটি আমাদের শরীরের জন্য কিছুটা ক্ষতির কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে। যেমন ধরুন হালকা বমি, মাথা ঘোরা বা প্রেসার লো হয়ে অজ্ঞান হয়েও যেতে পারে। তাই খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই সেটি মাথায় রাখবেন।

বেল পাতার রস খাওয়ার নিয়ম

বেল পাতার রস খাওয়ার নিয়ম একেবারেই সহজ। বেল পাতায় যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি এর রসেও রয়েছে একই রকম অপকারিতা। আপনি বেলপাতা খেলে যে উপকারিতা পাবেন এর রস করে খেলেও ঠিক সেই উপকারিতাগুলোই পাবেন। তবে অনেকেই বেল পাতার রস করে খেতে খুব পছন্দ করে। বেল পাতার রসের উপকারিতা সম্পর্কে জানলেও এটি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানেনা। বেল পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশে চলুন জেনে নিই বেল পাতা রস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।

বেল পাতার রস করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বেলপাতা ভালোভাবে ধুয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে এটি থেকে রস বের করে খেতে পারে। আবার সরাসরি গাছ থেকে কচি বেলপাতা পেরে এটি চিবিয়েও আপনারা খেতে পারেন। অনেকেই বেল পাতার রস সরাসরি খেতে পারেনা বলে এর সাথে মিশ্রি অথবা লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে থাকেন। যে উপায়ে খাবেন এটি থেকে উপকারিতা পাবেন। সকালে খালি পেটে বেল পাতার রস খাওয়া উত্তম। খালি পেটে বেল পাতার রস খেলে এর কার্যকারিতা অনেক গুণ বেড়ে যায়। তবে মনে রাখবেন এটি অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া যাবেনা।

কচি বেলপাতা খেলে কি হয় 

কচি বেলপাতা খেলে কি হয় এই প্রশ্নটি অনেকের মনের মধ্যে আসে। তাই অনেকেই কচি বেলপাতা খেলে কি হয় এটি সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন। আসলে কচি বেলপাতা খাওয়া একটি পূর্ণবয়স্ক বেল পাতা খাওয়া তুলনায় অনেকটা সহজ এবং মজাদার। তাই সকলে কচি বেলপাতা খেতে একটু বেশি পছন্দ করে। কচি বেলপাতা খাওয়া অথবা একটি পূর্ণবয়স্ক বেলপাতা খাওয়ার মধ্যে উপকারিতা দিক দিয়ে তেমন কোন পার্থক্য নেই। 

বেলপাতা আপনি পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় খেলে যে পরিমাণ উপকারিতা পাবেন এটি কচি অবস্থায় খেলেও আপনি ঠিক একই সমান উপকারিতা পাবেন। এখানে উপকারিতা তেমন কোন পার্থক্য হবে না। বেল গাছের নিচে যেয়ে আপনি একটি কচি বেলপাতা পেরে সাথে সাথে খেয়ে ফেলবেন। এভাবে গাছ থেকে সরাসরি পাতা তুলে খেলে আপনি পুষ্টিগুণ বরং একটু বেশি পাবেন। আর এভাবে খাওয়াটাও খুব সহজ একটি ব্যাপার কোন ঝামেলা থাকেনা।

বেল পাতার রস খেলে কি হয়

বেল পাতার রস খেলে কি হয় এটি সম্পর্কে জানা থাকলে আপনি নিজেও নিয়মিত বেল পাতার রস খেতে ভুলবেন না। কারণ বেল পাতার রসে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভেষজ গুনাগুন যা আমাদের শরীরে নানা রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। এটি আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগের সমাধান দিতে পারে। বেল পাতায় থাকার ঔষধি গুনাগুনের কারণে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা বেলপাতা কে একটি মহা ঔষধ বলে বিবেচনা করেছেন। এটি আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিল করছেন রোগ দূর করে আমাদের শরীরকে স্বাবলম্বী করে তুলবে সহায্য।

  • বেল পাতার রস রক্তশূন্যতা দূর করতে একটি সুন্দর সমাধান। আমাদের দেশে রক্তশূন্যতায় ভুগছেন এমন মানুষ খোঁজ করলে দেখা যাবে এর সংখ্যা কম নয়। নিয়মিত বেল পাতার রস খেলে আমাদের রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও বেল পাতার রস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কার্যকরী। শুধুমাত্র রক্তশূন্যতা বা উচ্চচাপ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে তা কিন্তু নয় এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনুভব উপকারী। 
  • বর্তমানে আমাদের দেশে মানুষের বয়স ৪০ বছর বা তার আগেই ডায়াবেটিসের কবলে পড়ছে। আর এই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে বেলপাতার রসের জুড়ি মেলা ভার। নিয়মিত বেল পাতার রস খেলে এটি আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে যার ফলে ডায়াবেটিস দূর হয়। আমাদের আরো একটি কমন রোগ হচ্ছে গ্যাস্ট্রিক। এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা যেন বর্তমানে প্রতিটা ঘরে ঘরে, প্রতিটা মানুষের মধ্যে।  আপনি যদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে চান তাহলে নিয়মিত বেল পাতার রস খান। 
  • আপনার কি চুল পড়ে মাথা টাক হয়ে যাচ্ছে। তাহলে আর বেশি চিন্তা না করে নিয়মিত বেল পাতার রস খেতে পারেন। কারণ আপনি নিয়মিত বেল পাতার রস খেলে এটি আপনার চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি যোগাবে এবং চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করব। আর চুল সুন্দর করতে কে না চাই। তাই চুলের যত্নে অবশ্যই নিয়মিত বেল পাতার রস খেতে পারে। চুলের গোড়া মজবুত করে চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করবে।
  • যারা প্রায় জ্বরে আক্রান্ত হয় অর্থাৎ জ্বর যাদের নিত্যদিনের সঙ্গী কোনমতেই ছাড়তে চায়না তারা নিয়মিত বেল পাতার রস খেতে পারেন। এটি জ্বর নিরাময়ের জন্য খুব দ্রুত কাজ করবে। জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়মিত কিছুদিন বেলপাতার রস খেলে দেখবেন জ্বর আপনাকে ছেড়ে একেবারেই পালিয়ে গেছে।
  • অতিরিক্ত গরম পড়লেই যারা অতিরিক্ত পরিমাণ ঘামে এবং অস্বস্তি বোধ করে তাদের জন্য বেল পাতার রস এক কার্যকারী ওষুধ বটে। গরমের হাত থেকে স্বস্তি পেতে অর্থাৎ শরীর ঠান্ডা রাখতে এবং ঘামের হাত থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই গরমকালে নিয়মিত কিছুদিন বেল পাতার রস খেতে ভুলবেন না। অল্প কিছুদিন এই বেল পাতার রস খেলে দেখবেন আপনার শরীর অনেকটা স্বস্তি পাচ্ছে।

বেল পাতার রস খেলে কি ক্ষতি হয় 

বেল পাতার রস খেলে কি ক্ষতি হয় এমন প্রশ্নের সম্মুখীন অনেক সময় হতে হয়। অনেকেই জানতে চান বেল পাতার রস খেলে কোন ধরনের কোন ক্ষতি হয় কিনা সেটা সম্পর্কে। ইতিমধ্যেই আমরা আপনাদের বেলপাতা খাওয়ার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতার কথা বলেছি এবং সেই সাথে কিছু অপকারিতার কথাও বলেছি। বেল পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের এই অংশ জানবো বেল পাতার রস খেলে কি ক্ষতি হয় সেটি সম্পর্কে।

এখানে  বেল পাতার অপকারিতা যে দিকগুলো সেগুলোই মূলত বেলপাতার রসের ক্ষতিকর। এর বাইরে অন্য কিছু নেই। মূলত বেল পাতার রস খাওয়া এবং বেলপাতা খাওয়ার উপকারিতা সব দিক দিয়ে বিবেচনা করলে দেখা যাবে এগুলো একই। চলুন এরপরেও আপনাদের বেল পাতার রস খেলে কি ধরনের ক্ষতি হয় সেগুলো আরো ভালোভাবে বুঝিয়ে দিই। 

  • অতিরিক্ত মাত্রায় রক্তচাপ কমে যায়।
  • অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে পেটের সমস্যা এমনকি ডায়রিয়া ও দেখা দেয়।
  • ওষুধের সাথে প্রক্রিয়া করে।
  • গর্ভাবস্থায় খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ 
  • এলার্জি বেড়ে যায় 
  • শর্করার মাত্রা তুলনামূলক অনেক কম যায় 
  • শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেশি কমে যায়

মূলত বেলপাতা বা বেলপাতার রস আমাদের শরীরের জন্য দুটোই খুব উপকারী। তবে উপরে এর যে অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিকগুলোর কথা বললাম এগুলো সব সময় প্রযোজ্য নয়। শুধুমাত্র আপনি যখন বেলপাতা অতিরিক্ত মাত্রায় ভাবে তখন এই ধরনের  সমস্যা গুলো আপনার শরীরে দেখা দিবে। কিন্তু আপনি যদি পরিনিত মাত্রা এখন তাহলে এটি আপনার শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকার বয়ে আনবে।

বেল পাতা দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায় 

বেল পাতা দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায় খুব সহজ। আমরা জানি বেলপাতা মেয়েদের রূপচর্চার কাজে সেই আদিমকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। একটি মেয়েদের রূপচর্চার একটি অংশ বলতে পারেন। কারণ এটি মেয়েদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা থেকে শুরু করে ব্রণ দূর করতে খুব ভালো কাজ করে। যাদের মুখে ব্রণের সমস্যা রয়েছে অথবা যাদের মুখে ব্রণের দাগ থাকে তারা খুব সহজেই বেলপাতা ব্যবহার করে এই সমস্যা থেকে সমাধান পেতে পারেন। আজ আপনাদের বেলপাতা দিয়ে ব্রণ দূর করার কয়েকটি উপায় সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই।

বেল পাতার পেস্ট: বেল পাতার পেস্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে আপনি কয়েকটি বেলপাতা গাছ থেকে তুলে ভালোভাবে বেটে সেটি দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নেন। এবার এই বেল পাতার পেস্টের সাথে অল্প একটু পানি যোগ করে ভালোভাবে মিশিয়ে পেজটির আপনার মুখের যে যে অংশে ব্রণ রয়েছে সেগু যন্ত্রণা হয়লোর উপর ভালোভাবে ব্যবহার করুন। এরপর ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ১৫-২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এভাবে অল্প কিছুদিন ব্যবহার করলেই দেখবেন আপনার মুখের ব্রণ দূর হয়ে গেছে এমনকি ব্রণের প্রদাহ ও একেবারেই দূর হয়ে যাবে। 

বেল পাতার রস: বেল পাতার রস ব্যবহার করেও আপনি খুব সহজেই ব্রণ একেবারেই দূর করে ফেলতে পারেন। বেল পাতা বেটে ব্রণের উপর লাগাতে যারা একটু বিরক্ত বোধ করেন তারা বেলপাতা বাটার পরে এটি থেকে রস বের করে নিয়ে সেই রসটা ব্রণের উপর কটন দিয়ে ভালোভাবে লাগাতে পারেন। এরপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এভাবেও আপনি খুব সহজেই বেলপাতার রস ব্যবহার করে মুখের ব্রণ দূর করতে পারেন। 

বেলপাতা ও নিম পাতার ব্যবহার: বেলপাতা এবং নিম পাতা ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। এই দুইটি উপাদান আমাদের ত্বকে এন্টিব্যাকটিরিয়াল হিসেবে কাজ করতে পারে। বেলপাতা এবং নিম পাতা দিয়ে ব্রণ দূর করার ক্ষেত্রে আপনি এই দুইটি পাতা বেটে একটি পেস্ট তৈরি করে নেন। এবার এই পেস্টটি ভালোভাবে মুখের উপরে থাকা ব্রনে লাগিয়ে 15 থেকে 20 মিনিট অপেক্ষা করে মুখ ধরে ফেলুন। কিছুদিন এরকম ভাবে ব্যবহার করলেই দেখবেন মুখের প্রদাহ, ব্রণ এমনকি ব্রণের দাগগুলো ও দূর হয়ে গেছে।

বেল পাতার রস ও মধু: বেল পাতার রস এবং মধু ব্রণ দূর করার জন্য খুব কার্যকরী একটি উপাদান। সেই ক্ষেত্রে প্রথমে কয়েকটি বেলপাতা বেটে অল্প একটু রস বের করে এর সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে ব্রণের ওপর ব্যবহার করতে হবে। এইভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলেই দেখবেন খুব সহজেই আপনার মুখের ব্রণ একেবারে দূর হয়ে গেছে। সেই সাথে ত্বক অনেক উজ্জ্বল এবং মসৃণ হবে।

উপরের এই কয়েকটি উপায়ে আপনি আপনার মুখের ব্রণ খুব সহজেই চাইলে দূর করতে পারবেন। এই উপাদানগুলো মুখের ব্রণ দূর করার জন্য বেশ কার্যকারী। এগুলো ব্যবহার করলে মুখের ব্রণ দূর হয়ে ত্বক আরও বেশি সুন্দর এবং অপরূপ হয়ে উঠবে। আশা করি এই উপায় গুলো অবলম্বন করে আপনি খুব সহজেই আপনার মুখের ব্রণ দূর করতে পারবেন।

ছেলেদের বেল পাতার রস খেলে কি হয়

ছেলেদের বেল পাতার রস খেলে কি হয় এটি সম্পর্কে না জানার কারণে অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন। আসলে এটি ছেলে অথবা মেয়ে বলে কোন বিষয় নেই। কারণ বেল পাতার রস কোন ব্যক্তি ভেদে উপকারিতা বা অপকারিতা বলে কিছু নেই। বেল পাতার রস একজন মেয়ের জন্য যেমন উপকারী ঠিক তেমনি অপরদিকে একজন ছেলের জন্য ততটাই উপকারী। এখানে ছেলে মেয়ে বলে কোন বিভেদ নেই। বেলপাতা মেয়েদের জন্য যে ক্ষেত্রগুলোতে ক্ষতিকর ছেলেদের জন্যও সেই ক্ষেত্রগুলোতেই ক্ষতিকর।

 এখানে আলাদা কোন বিষয় নেই। অনেকের মধ্যেই একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে বেল পাতার রস ছেলেরা খেলে তাদের সেক্স কমে যায়। এটি নিতান্তই একটি ভুল ধারণা ছাড়া কিছুই নয়। কারণ এর বৈজ্ঞানিক কোন ব্যাখ্যা নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় এই ধরনের কোন কিছু উল্লেখ নেই। তাই এ ধারণা একেবারেই ভুল। বেল পাতা খাওয়ার ফলে ছেলেদের আলাদাভাবে কোন ক্ষতি হবে না। একজন মেয়ের ক্ষেত্রে যেমন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে ঠিক ছেলেদের ক্ষেত্রে সেগুলোই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। 

তাই নিয়ম মেনে একজন ছেলে যদি বেলপাতা সঠিক পরিমাণ মত খায় তাহলে একজন মেয়ে ঠিক যে ধরনের উপকার পাবে একজন ছেলেও ঠিক সেই ধরনের উপকার পাবে। অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে একজন মেয়ের যে ধরনের ক্ষতি হবে একজন ছেলেরও ঠিক সেই ধরনের ক্ষতি হবে। তাই বেল পাতার রস খেলে ছেলেদের ক্ষতি হবে এমন কোন বিষয় নেই। তাই একজন ছেলে নিশ্চিন্তে বেল পাতার রস খেতে পারে।

বেল পাতা দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরির নিয়ম

বেল পাতা দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরির নিয়ম সম্পর্কে অনেক মেয়েরাই জানতে চান। কারণ বেলপাতা এমন একটি উপাদান যা যুগ যুগ ধরে মেয়েদের রূপচর্চার কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি খেলে শুধু আমাদের শরীরের জন্য উপকার তা কিন্তু নয় এটি রূপচর্চার কাজেও অনেক উপকারী। শুধু তাই নয় বেল পাতার তৈরি ফেসপ্যাক বেশ জনপ্রিয়। বেল পাতার তৈরি ফেসপ্যাক আমাদের ত্বকের জন্য অনেক উপকারী।  


বেল-পাতা-দিয়ে-ফেসপ্যাক-তৈরির-নিয়ম

এটি শুধুমাত্র আমাদের ত্বক ফর্সা করে তা কিন্তু নয় এটি ব্রণের প্রদাহ দূর করার থেকে শুরু করে ব্রণের দাগ দূর করতেও বেশ উপকারী। উপরের আলোচনায় আমরা  বেল পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সহ আরো নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের বেলপাতা দিয়ে তৈরি বেশ কয়েকটি ফেসপ্যাক বানানো নিয়ম এবং এটি ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে নিই।

বেলপাতা ও চন্দনের তৈরির ফেসপ্যাক:

  • উপকরণ: কয়েকটি তাজা বেল পাতা 
  • এক চা চামচ চন্দন গুড়া 
  • সামান্য পরিমাণ গোলাপ জল 

প্রস্তুত প্রণালী: প্রথমে বেল পাতাগুলো ভালোভাবে বেটে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এবার বাটা বেল পাতার পেস্টের সাথে এক এক করে চন্দন গুঁড়া এবং গোলাপ জল ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। ভালোভাবে মিশে গেলে সেই পেস্টটি মুখে এবং গলায় ভালোভাবে মেখে নিতে হবে। এভাবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। ১০-১৫ মিনিট হয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে আপনি বেলপাতা এবং চন্দনের গুঁড়ো দিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে বেশ কিছুদিন ব্যবহার করলে দেখবেন আপনার তো আগের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর এবং দাগহীন হয়ে গেছে।

বেল পাতা এবং নিমপাতা তৈরি ফেসপ্যাক: 

  • উপকরণসমূহ: কয়েকটি বেলপাতা 
  • কয়েকটি নিমপাতা 
  • এক চা চামচ মধু 

প্রস্তুত প্রণালী: বেলপাতা এবং নিম পাতার তৈরি ফেসপ্যাক তৈরি করার ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে বেলপাতা এবং নিম পাতা গুলো ভালোভাবে বেটে নিতে হবে। এবার বাটা বেল পাতা এবং নিমপাতার সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। খেয়াল করবেন পেস্টটি যেন খুব বেশি পাতলা অথবা বেশি ঘন হয়ে না যায়। 

এরপর এই পেস্ট টি সারা মুখে এবং গলায় ভালোভাবে মেখে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ১৫-২০ মিনিট হয়ে গেলে এটি কিছুটা শুকিয়ে আসবে। সে সময় ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে মুখ ধুয়ে নিন। মনে রাখবেন এই ফেসপ্যাকটি আমাদের মুখের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এই ফেসপ্যাকটি আমাদের ত্বকে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে খুব ভালো কাজ করে।

আরো পড়ুন: চুলে মেহেদি পাতা দেওয়ার ১০ টি উপকারিতা

উপরের আলোচনায় আমরা আপনাদের বেলপাতা দিয়ে তৈরি দুটি ফেসপ্যাক তৈরি নিয়ম সম্পর্কে বলেছি। এই দুটি ফেসপ্যাক ছাড়াও আপনি চাইলে খুব সহজে বেল পাতা দিয়ে আরও অনেক ফেসপ্যাক তৈরি করে নিতে পারেন। যেমন ধরুন বেলপাতা সাথে মুলতানি মাটির তৈরি ফেসপ্যাক, বেল পাতার সাথে টক দই মিশিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক এভাবে আপনি শুধুমাত্র উপরের পদ্ধতি অবলম্বন করে বেলপাতা দিয়ে অনেক ফেসপ্যাক তৈরি করে নিতে পারবেন। যা ত্বকের নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল হবে, ত্বকের ব্রণ এবং ব্রণের দাগ দূর হবে, এছাড়াও তো অনেক মসৃণ এবং সতেজ হবে।

শেষ কিছু কথা 

আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের বেল পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা, বেল পাতার পুষ্টিগুণ, বেলপাতা খাওয়ার নিয়ম, বেল পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা, বেল পাতার রস খাওয়ার নিয়ম, কচি বেলপাতা খাওয়ার উপকারিতা, বেল পাতার ফেসপ্যাক তৈরির নিয়ম সহ বেল পাতার আরো অনেক অজানা বিষয় সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। 

এ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি বেলপাতা সম্পর্কে অনেক বিষয় জানতে পারবেন যা আপনার এবং আপনার পরিবারের অনেক উপকারে আসবে। আশা করি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন এবং বেলপাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। এরকম আরো ভালো ভালো আর্টিকেল পেতে নিয়মিত ডিজিটাল আবিদা ওয়েবসাইটটির সঙ্গে থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজিটাল আবিদা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url